নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২ মে ৷৷ অভাবের তাড়নায় কাউকেই না জানিয়েই ২ হাজার টাকার বিক্রি করে দেওয়া পাঁচদিনের পুত্র সন্তান রামনগর পুলিশ ফাঁড়ির সহযোগিতায় ফিরে পেলেন স্বামী৷ এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার রাজধানী আগরতলার ভাটি অভয়নগর এলাকায়৷ এই নিয়ে গত আগরতলার ভাটি অভয়নগর এলাকায়৷ এই নিয়ে গত ৭২ ঘন্টায় রাজধানী আগরতলায় পর পর দুটি শিশু সন্তান বিক্রির অভিযোগ উঠল৷
অবিশ্বাস্য হলেও এটাই ঘটনা৷ গর্বের শহর রাজধানী আগরতলায় ইদানিংকালে অভাবের তাড়ায় শিশু বিক্রির ঘটনা উদ্বেগ জনক ভাবেবৃদ্ধি পেয়ে চলছে৷ রবিবার, আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংহতি দিবসের রাতে অভাবের তাড়নায় পাঁচদিনের এক পুত্র সন্তানকে মাত্র ২ হাজার টাকায় এক নিঃসন্তান মার কাছে বিক্রি করে দিয়েছিলেন এক অসহায়গর্ভধারিণী মা৷ এি অমানবিক এবং সভ্য সমাজের কাছে হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে আগরতলা পৌর নিগম এলাকার রাধানগর ইস্ট কলোনি এলাকায়৷ ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, রাধানগর ইস্ট কলোনির বাসিন্দা পেশায় রিক্সা শ্রমিক ছেনু দাসের স্ত্রী পিঙ্কি দাস গত পাঁচদিন আগে এক ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন৷ ছেনু ও পিঙ্কির সংসারে আরো দুজন শিশু সন্তান রয়েছে৷ অভাব আর অনটনের দ্বিমুখী আক্রমণে জেরবার এ সংসারের স্বাচ্ছন্দ্য ফেরাতে মা মিনু গোয়ালার সাথে পরামর্শ করে নবাগত সদস্যটিকে দুই হাজার টাকা বিনিময়ে নিজের মাসতোতো বোন নিঃসন্তান লক্ষ্মীরাণী দাসের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন শিশুটির গর্ভধারিনী মা পিঙ্কি দাস৷ স্বামীকে ঘটনাটি জানাননি তিনি৷ গতকাল অর্থাৎ রবিবার স্বামী ছেনু দাসকে কোর্টে নিয়ে গিয়ে একটি সাদা কাগজে টিপসই দিতে বলেছিলেন পিঙ্কি টিপসই দিয়ে কোর্ট চত্বর ছেড়ে স্বামী চলে যাওয়ার পর পিঙ্গি তার ৫ দিনের শিশু পুত্রটিকে মাসতোতো বোন লক্ষ্মীরাণী দাসের হাতে তুলে দেন৷ সোমবার সাংবাদিকদের কাছে প্রকারন্তের শিশু বিক্রির কথা স্বীকারও করেন শিশুটির গর্ভধারিনী মা পিঙ্কি দাস৷ তিনি জানান, দুই সন্তানের মুখেই ঠিক করে খাবারতুলে দেওয়া সম্ভব হয় না তাদের৷ এই অবস্থায় তৃতীয় শিশুটির ভরণপোষণ যে কিভাবে চলবে তা ভেবে পাচ্ছিলেন না তিনি৷ তাই পাঁচদিনের শিশুটিকে নিঃসন্তান মাসতোতো বোন লক্ষ্মীরাণী দাসের কুলে তুলে দেন তারা৷ তিনি জানান, স্বামী জানেন, জেনে শুনেই কোর্টের কাগজে স্বাক্ষরও করেন স্বামী৷ পিঙ্কি এও জানান যে ওষুধ খাবার জন্য মাসতেতো বোন সন্তানের বিনিময়ে তাকে দুই হাজার টাকা দিয়েছেন৷
এদিকে রবিবার রাত বাড়ি ফেরে সদ্যোজাত বাচ্চাকে বিক্রি করে দেবার ঘটনা শুনে মাথা গরম হয়ে যায় পিঙ্কির স্বামী পেশায় রিক্সা শ্রমিক ছেনু দাসের৷ রাতেই ঘটনাটি জানিয়ে শিশু পুত্রকে ফিরে পেতে রামনগর পুলিশ ফাঁড়ির সাহায্য চান ছেনু দাস৷ এদিন রামনগর পুলিশ ফাঁড়িতে বসেই ছেনু দাস জানান তিনি জিবি বাজারে ছিলেন৷ স্ত্রী ও শ্বশুর শাশুড়ির ফোন পেয়ে কোর্টে যান৷ তাকে একটি সাদা কাগজে টিপ সই দিতে বলা হয়৷ তিনি টিবি রোগে আক্রান্ত শ্বশুর শংকর গোয়ালার আর্থিক সাহায্যের দরখাস্ত ভেবে টিপসই দিয়ে দেন৷ কিন্তু শিশু বিক্রির কথা জানতেন না বলেও জানান৷ শিশুটির পিতা৷
ঘটনাটি জেনে রামনগর ফাঁড়ির পুলিশ লক্ষ্মীরাণী দাসের বাড়ি থেকে সদ্যোজাত শিশুটিকে উদ্ধার করে ছেনু দাসের হাতে তুলে দেন৷ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাধানগর ইস্ট কলোনি এলাকার জনমনে তীব্র চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়৷ উল্লেখ্য, এ নিয়ে গত ৭২ ঘন্টায় আগরতলা শহরেই দুই দুটি শিশু বিক্রির ঘটনার অভিযোগ পাওয়া গেল৷ এর আগে গত ৩০ শে এপ্রিল ডুকলি এলাকায়ও অভাবের তাড়নায় এক শিশুকে বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছিল৷
2016-05-03