খাস জমি পুনঃরুদ্ধার অভিযান ঘিরে উত্তেজনা বড়দোয়ালীতে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৪ এপ্রিল৷৷ রাজধানী আগরতলা শহরকে যানজট মুক্ত করার লক্ষ্যে উড়ালপুল তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ এটি রাজধানী শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও একটি আকর্ষণীয় পদক্ষেপ৷ আগরতলা শহরবাসী সহ বুদ্ধিজীবী মহল এই উদ্যোগের প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ কিন্তু উড়ালপুল তৈরি করতে গিয়ে প্রয়োজনীয় জায়গা সংকটে বিপাকে পড়তে হয়েছে প্রশাসনকে৷ নাগেরজলা থেকে ড্রপগেইট পর্যন্ত এলাকায় যে উড়ালপুলটি তৈরি হচ্ছে DSC_00061 (78)সেটির জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা সংস্থান করে রেখেছে রাজ্য সরকার৷ সরকারি জায়গা দীর্ঘদিন ধরেই জবর দখল করে রেখেছেন একাংশ মানুষজন৷ এই জায়গা জবর দখলমুক্ত করা সম্ভব না হলে উড়াল পুল তৈরির প্রয়াস কার্যত ব্যর্থতায় পর্যবেশিত হবে৷ সে কারণেই রাজ্য সরকার ও প্রশাসন ড্রপগেইট থেকে নাগেরজলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় রাস্তার দুপাশে যেসব বাড়িঘর গড়ে তোলা হয়েছে সেগুলো ভেঙ্গে দিয়ে প্রয়োজনীয় জায়গার সংস্থান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ২০১৩ সালেই জমি ডিমারগ্রেশন করে বিভিন্ন জায়গায় পিলারও পুতে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু ঐসব জায়গার দখল সহজে ছাড়তে চাননি অনেক পরিবার৷ ফলে, রাস্তা প্রশস্ত করা রীতিমত কষ্টকর হয়ে উঠে৷ রাজ্য সরকার ও রাজ্য প্রশাসন  উড়াল পুল করার তাগিদে এই জটিলতা নিরসনের জন্য দফায় দফায় গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও করেছে৷ গতকাল সর্বশেষ বৈঠকটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ প্রশাসনের এই বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল যে কোন মূল্যে জবর দখলমুক্ত করে উড়ালপুল তৈরি করার উদ্যোগকে স্বাগত জানানো হবে৷ সে পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রশাসন শুক্রবার রাত থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করে৷ নাগেরজলা থেকে ড্রপগেইট পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানোর লক্ষ্যে  ভোর রাত থেকেই  প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঐ এলাকায় পৌঁছেন৷ বেশ কয়েকটি বোলডোজার নিয়ে আগরতলা পুর নিগমের টাক্সফোর্স বাহিনী এবং অতিরিক্ত কিছু শ্রমিককে নিয়ে এই অভিযান চালানো হয়৷ অভিযানকে ব্যর্থ করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছিল৷ এমনকি দখলে রাখা জমি যাতে দখলমুক্ত করতে না পারে সেজন্য চেষ্টারও DSC_00061 (46)কোন ত্রুটি রাখেননি তারা৷ কিন্তু তাদের সে স্বপ্ণ চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়েছে প্রশাসন৷ যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য পুলিশের পাশাপাশি বেশ কিছু সংখ্যক টিএসআর জওয়ানকে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত করা হয়৷ জেলাশাসক মিলেন্দ রামটেকে এবং এসডিএম সহ অন্যান্য পদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত থেকে এই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেন৷ অভিযান চলাকালে গন্ডগোল বাঁধানোর জন্য চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেননি বিভিন্ন মহল৷ জেলাশাসক সহ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপর হামলা চালানোর চেষ্টাও করা হয়৷ এইধরনের ঘটনায় জড়িত কয়েকজনকে পুলিশ আটক করে৷ প্রশাসনের তরফে এলাকার লোকজনদের শেষবারের মতো চরম সতর্কবার্তা শোনানো হয়৷ এই সতর্কবার্তার কারণেই অনেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেননি৷ নিজেদের তৈরি করা ঘরবাড়ি বোলডোজার দিয়ে ভাঙতে শুরু করে টাক্সফোর্স বাহিনী৷ সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত পাওয়া খবরে জানা গেছে নাগেরজলা থেকে ড্রপ গেইট পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার পাশের বেআইনী দখলদারদের উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ সন্ধ্যার পর আজকের দিনের মতো অভিযান আপাতত বন্ধ রাখলেও সোমবার সকাল থেকেই পুনরায় অভিযান শুরু হবে৷ এদিকে, নাগেরজলা থেকে ড্রপগেইট পর্যন্ত এলাকায় ভাঙচুর চালানোর ফলে এই রাস্তা দিয়ে যান চলাচলও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে পড়ে৷ তাতে আপাতত জনদুর্ভোগ দেখা দিলেও ভবিষ্যতে এই প্রকল্পটি আরো বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে৷ সে কারণেই বুুদ্ধিজীবীমহল রাজ্য সরকারের এবং রাজ্য প্রশাসনের এই উদ্যোগেকে সাধুবাদ জানিয়েছে৷ এই উচ্ছেদ অভিযানের ফলে উড়ালপুল নির্মাণকারী সংস্থা কাজ করার ক্ষেত্রে দারুণ উৎসাহ পাবে এবং দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে পারবে৷ সে প্রত্যাশাকে মাথায় রেখেই সাধারণ মানুষ প্রশাসনের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *