নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৯ এপ্রিল৷৷ রাজ্যবাসীর ভাবাবেগে আঘাত দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে ব্রডগেজে স্বপ্ণের যাত্রী রেল পরিষেবা৷ রেলের ঘোষণা অনুযায়ী বাংলা নববর্ষেই আগরতলা থেকে ব্রডগেজে যাত্রী রেল পরিষেবা শুরু হওয়ার কথা ছিল৷ অন্তত কলকাতা পর্যন্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে রাজ্যবাসী যাতায়াত করতে পারবেন বলে রেল কর্তৃপক্ষ সহ রেল প্রতিমন্ত্রীও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন৷ কিন্তু কেবলমাত্র পরিকাঠামোগত ঘাটতির কারণে এখনই আগরতলা থেকে সরাসরি অন্তত কলকাতা যাত্রী রেল পরিষেবা শুরু হচ্ছে না৷ পূর্বোত্তর সীমান্ত রেলের লামডিং ডিভিশনের ডিভিশন্যাল রেলওয়ে ম্যানেজার নীরাজ কুমার রাজ্যের পরিবহন সচিবকে জানিয়েছেন আগরতলা স্টেশনে রেল সারাইয়ের পরিকাঠামো গড়ে ওঠেনি৷ ফলে এখনই আগরতলা থেকে দূরপাল্লার যাত্রী রেল পরিষেবা শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না৷ তাতে রাজ্যবাসীর দীর্ঘদিনের বহু কাঙ্খিত স্বপ্ণ ধূলায় মিশে যাওয়ার অবস্থা৷ দীর্ঘ সংগ্রামের জেরে রাজ্যে ব্রডগেজে যাত্রী রেল পরিষেবা নিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ এমনকি রেলমন্ত্রক যে স্বর্ণালি স্বপ্ণ দেখিয়েছে রাজ্যবাসীকে তা পূরণ হতে আরো বিলম্ব হওয়ায় হতাশ ত্রিপুরার আপামর জনগণ৷
রাজ্যে ব্রডগেজে যাত্রী রেল পরিষেবা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরো বাড়ল৷ কারণ, আগরতলায় রেল সারাইয়ের পরিকাঠামো গড়ে তুলতে সময় লাগবে আরো ছয় থেকে সাত মাস৷ তাতে সেপ্ঢেম্বর-অক্টোবরের আগে এই পরিকাঠামো গড়ে তোলা কোনমতেই সম্ভব হবে না বলে পূর্বোত্তর রেলের লামডিং ডিভিশনের ডিভিশনাল ম্যানেজার নীরজ কুমার রাজ্যের পরিবহন সচিব সমরজিৎ ভৌমিককে জানিয়েছেন৷ ফলে দূরপাল্লার যাত্রী রেল পরিষেবার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷ এই খবরে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করা হলে আপাতত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনা করা হবে বলে ডিআরএম নীরজ কুমার রাজ্যের পরিবহন সচিবকে আশ্বস্ত করেছেন৷ অবশ্য আগরতলা থেকে শিলচর পর্যন্ত লোকাল ট্রেন চলতি মাসেই শুরু হবে বলে তিনি জানিয়েছেন৷
রাজ্যের পরিবহন সচিবকে রেল সারাইয়ের পরিকাঠামো আগরতলায় গড়ে না উঠায় আপাতত দূরপাল্লার যাত্রী ট্রেন পরিষেবা রাজ্য থেকে চালু করতে পারছে না বলে পূর্বোত্তর রেলের লামডিং ডিভিশনের ডিভিশন্যাল রেলওয়ে ম্যানেজার নীরাজ কুমার শ্রী ভৌমিককে জানিয়েছেন৷ বিষয়টি সহজভাবে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় বলে শ্রী ভৌমিক ডিআরএম শ্রী কুমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে তিনি জানান, আপাতত তাহলে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস যা বর্তমানে শিলচর থেকে শিয়ালদা পর্যন্ত যাতায়াত করছে তা সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে আগরতলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত করা যেতে পারে৷ কারণ, শিলচরে রেল সারাইয়ের পরিকাঠামো রয়েছে৷ ফলে, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসটি আগরতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হলে আপাতত কলকাতা পর্যন্ত যাত্রী রেলে যাতায়াত করা সম্ভব হবে৷ রাজ্যের পরিবহন সচিব পূর্বোত্তর রেলের ডিভিশন্যাল রেলওয়ে ম্যানেজারের এই প্রস্তাবে সরাসরি সম্মতি প্রকাশ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস আগরতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণের মাধ্যমে ব্রডগেজে যাত্রী রেল সূচনায় কোন আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন৷ তবে, চলতি মাসেই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে বলে তিনি জোরালো দাবি জানিয়েছেন৷ পূর্বোত্তর রেলের লামডিং ডিভিশন্যাল রেলওয়ে ম্যানেজার পরিবহন সচিবকে আশ্বস্ত করে বলেন, আগরতলা থেকে শিলচর পর্যন্ত ব্রডগেজে লোকাল ট্রেন চলতি মাসেই শুরু হবার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে৷ পরিবহন সচিব এক্সপ্রেস ট্রেন এবং লোক্যাল ট্রেন দুটি চলতি মাসেই চালু করার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার উপর জোর দিয়েছেন৷ ডিআরএম নীরাজ কুমার পরিবহন সচিবকে নির্দিষ্ট কোন প্রতিশ্রুতি না দিলেও চলতি মাসে এই দুটি রেল চালু করার বিষয়ে আন্তরিকতার সাথে ভাবনা চিন্তা করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন৷
তবে, শিলচর থেকে যে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসটি শিয়ালদা পর্যন্ত যাচ্ছে সেটি আগরতলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হলে কয়েকটি বিষয় নিয়ে নানা প্রশ্ণ উঠেছে৷ প্রথমত, আগরতলা থেকে শিলচর হয়ে শিয়ালদা পর্যন্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে সপ্তাহে নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে রাজ্যবাসী যাতায়াত করতে পারবেন৷ কিন্তু কলকাতা থেকে ফেরার ক্ষেত্রে সরাসরি আগরতলা পর্যন্ত আসা সম্ভব হবে কিনা সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে৷ কারণ, যেহেতু রেল সারাইয়ের পরিকাঠামো শিলচরে রয়েছে সেক্ষেত্রে হয়তবা ফেরার পথে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস কলকাতা থেকে শিলচর পর্যন্ত আসবে৷ সেক্ষেত্রে সরাসরি আগরতলা পর্যন্ত রেলে করে ফেরার বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষ কিভাবে সুনিশ্চিত করবে তা নিয়েই বিতর্ক দেখা দিয়েছে৷
এদিকে, ডিআরএম নীরাজ কুমার পরিবহন সচিব সমরজিৎ ভৌমিককে জানিয়েছেন, পণ্যবাহী রেল পরিষেবার ক্ষেত্রে রেলমন্ত্রকের ছাড়পত্র আজ মিলেছে৷ তাতে এখন থেকে প্রতিনিয়ত রাজ্যে পণ্যবাহী রেল আসা যাওয়া করতে পারবে৷ এই খবরের ভিত্তিতে পরিবহন সচিব ইতিমধ্যে এফসিআইকে লোডিং শুরু করা এবং রেলের র্যাক বুকিং করার নির্দেশ দিয়েছেন৷
2016-04-20