রাজ্যে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসগুলির হাল হকিকৎ কি তাহার বিন্দু বিসর্গও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ জানিতে পারে না৷ ফলে, রাজ্যে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের যেসব অফিস রহিয়াছে সেগুলির বেশীরভাগই হরিঘোষের গোয়ালে পরিণত হইয়াছে বলিলে বোধহয় ভুল বলা হইবে না৷ বিশেষ করিয়া কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীন প্রসার ভারতীর পরিচালিত আকাশবানী ও দূরদর্শন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগগুলি তো এখন উদ্বেগের বিষয় হইয়া দাঁড়াইয়াছে৷ বিভিন্ন বেসরকারী বৈদ্যুতিন চ্যানেল চালু হওয়ায় আকাশবাণী ও দূরদর্শনের প্রোগ্রাম দেখা বা শোনার ক্ষেত্রে বিশাল চ্যালেঞ্জ দেখা দিয়াছে৷ কারণ সরকার নিয়ন্ত্রিত এই দুইটি সংস্থার অভ্যন্তরে কায়েমি স্বার্থবাদীদের থাবা বিস্তৃত হইয়াছে৷ প্রোগ্রাম পাওয়াইয়া দেওয়া, চাকুরী দেওয়া ইত্যাদি ঘটনায় আকাশবানী ও দূরদর্শন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠিতেছে৷ বিশেষ করিয়া দূরদর্শনের সংবাদ বিভাগ সাংবাদিক নিয়োগ করিতে গিয়া বিস্তর কেলেংকারীর আশ্রয় নিয়াছে৷ আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে আগরতলা দূরদর্শন সাংবাদিক নিয়োগ করিয়াছে বলিয়া গুরুতর অভিযোগ উঠিয়াছে৷ এইসব নিয়োগের ক্ষেত্রে দূরদর্শন কর্তৃপক্ষের ঘোষিত নীতিই লঙ্ঘিত হইয়াছে৷ দূরদর্শনের স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে বহু অভিযোগ উঠা সত্বেও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ চোখ বুজিয়া থাকিতেছেন৷ দূরদর্শন ও আকাশবানীর দীর্ঘ এক ঐতিহ্য রহিয়াছে৷ সংস্থার বিভিন্ন অনুষ্ঠান সংবাদ প্রচার যথেষ্ট আকর্ষণীয়ই ছিল না, অনেক ক্ষেত্রেই প্রচারের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা নিতে পারিয়াছিল৷ অথচ আজ এই দূরদর্শন ও আকশাবণীর দর্শক ও শ্রোতার সংখ্যা মারত্মকভাবে কমিয়াছে৷ সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রসার ভারতীর সংস্থা দূরদর্শন ও আকাশবাণীকে জন বিচ্ছিন্নতার পথে নিয়া গিয়াছে৷ এই দুই সংস্থা দিনে দিনে তলাইয়া গেলেও টাটবাট ছিল অনেক বেশী৷ শুধু টাটবাট নহে, গৌরীসেনের টাকায় নাচা৷ জেলা স্তরে সাংবাদিক নিয়োগ কিরতে গিয়াই দূরদর্শনের বার্তা সম্পাদক লোভ সামলাইতে পারেন নাই৷ যদি তাহা সত্যি হয় তাহা হইলে বলিতে হইবে দূরদর্শন ও আকশাবানীর জনবিচ্ছিন্নতা বাড়িয়া যাইবে৷ প্রোগ্রামের নামে লক্ষ লক্ষ টাকা বিলি হইতেছে৷ অথচ এই সব নিম্নমানের ও অরুচিকর প্রোগ্রাম দর্শকদের মনকে নাড়া দেয় না৷ দূরদর্শন ও আকশাবানীর ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করিতে হইলে সমস্ত অবক্ষয় মুক্ত হইতে হইবে৷
আকাশবাণী ও দূরদর্শন কেন্দ্র একসময় দর্শক শ্রোতাদের মনে তুফান ছুটাইত৷ আজ তাহা একেবারেই হারাইয়া গেল, বিস্মৃতির অতলে যেন তলাইয়া গেল৷ যদি প্রসার ভারতীর এই দুই সংস্থাকে বাঁচাইতে হয়, জনমনে হৃত গৌরব পুণরুদ্ধার করিয়া, লজ্জার হাত হইতে বাঁচাইতে প্রয়াসী হয়, তাহা হইলেই হয়তো আবার সেই গৌরব ফিরাইয়া আনা যাইবে৷ আকাড়বাণী ও দূরদর্শনের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নিয়া জনমনে ক্ষোভ বাড়িতেছে৷ আজ সেই সব অভিযোগগুলি খতাইয়া দেখিতে হইবে৷ তাহা না হইলে এই গৌরবের দুটি সংস্থা হারাইয়া যাইবে৷
2016-04-11