নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ৮ এপ্রিল৷৷ কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে পদত্যাগ করে সুদীপ রায় বর্মণ যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন তা সহজভাবে নেয় নি দলের হাইকমান্ড৷ সূত্রের খবর, শুক্রবার কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণকে দলবিরোধী অবস্থানের জের শোকজ নোটিশ পাঠিয়েছেন৷ তাতে আগামীদিনে শ্রী বর্মণকে কংগ্রেস থেকে বরখাস্ত করার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে৷ এদিকে, সুদীপবাবু দুয়েকদিনের মধ্যে কলকাতায় গিয়ে তৃণমূল নেতৃত্বদের সাথেও বৈঠক করবেন বলে সূত্র অনুসারে জানা গেছে৷
বৃহস্পতিবার বাজেট অধিবেশন শেষে কংগ্রেস পরিষদীয় দল নেতা পদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ৷ সে মোতাবেক বিধানসভার অধ্যক্ষ রমেন্দ্রচন্দ্র দেবনাথের কাছে পদত্যাগ পত্রও তুলে দিয়েছেন তিনি৷ কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে পদত্যাগের বিষয়ে সুদীপ রায় বর্মণের যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সাথে জোট করে কংগ্রেস প্রসঙ্গে রাজ্যে ভুল বার্তা ছড়াচ্ছে৷ তিনি সোনিয়া গান্ধীকে লেখা চিঠিতে হতাশা ব্যক্ত করে জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে কংগ্রেসের নাটকীয় পটপরিবর্তনে দলের নীতি আদর্শ নিয়ে প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনে সমঝোতার কি এমন প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তা নিয়ে তিনি প্রশ্ণ তুলেছেন৷ ত্রিপুরা এবং কেরেলায় এক অবস্থান কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে অন্য অবস্থানকে ঘিরে জনমনে ভুল বার্তা পৌঁছেছে বলে তিনি দাবি করেন৷ শ্রীমতী গান্ধীকে লেখা চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেছেন ত্রিপুরা এবং কেরেলাতে বামেদের সাথে বিরোধীতা করছে কংগ্রেস৷ অথচ পশ্চিমবঙ্গে সেই বামেদের সাথেই সমঝোতা করে নির্বাচনী লড়াইয়ে কংগ্রেস অবতীর্ণ হয়েছে৷ তাতে ত্রিপুরায় রাজ্যবাসীর মনে কংগ্রেসের নীতি আদর্শ নিয়ে নানা প্রশ্ণ উঠতে শুরু করেছে৷ তিনি দীপ্ত কন্ঠে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক এবং কেরেলা ও ত্রিপুরাতে রাজনৈতিক শত্রুতার সম্পর্ক এই তত্ত্ব মানুষ বিশ্বাস করে না৷ কংগ্রেস হাইকমান্ডের পশ্চিমবঙ্গকে নিয়ে বামেদের সাথে সমঝোতা শুধু এই তিনটি রাজ্য নয়৷ জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলবে বলে শ্রী বর্মণ দাবি করেন৷ গতকাল তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, বামেদের সাথে কোনভাবেই আপোষ করা যাবে না৷ কংগ্রেস হাইকমান্ড নীতি আদর্শ বিসর্জন দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে বামেদের সাথে সমঝোতার পথে হাঁটলেও এই সিদ্ধান্ত কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না৷ গতকাল তিনি বঙ্গের কংগ্রেস নেতৃত্বদের দেওয়ালিপনার প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, সস্তা রাজনীতির স্বার্থে হয়ত বা পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস নেতৃত্বরা বাম আমলে অত্যাচার ভুলে গেছেন৷ যার কারণে এই বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে সেই বামেদের সাথে হাত ধরাধরি করে নির্বাচনী লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন৷ দলীয় হাইকমান্ডের বামেদের সাথে সখ্যতার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে শ্রীবর্মণ কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি পাঠিয়ে তার তীব্র আপত্তির কথা জানিয়েছেন৷ এরই সাথে দলের এই ভুল সিদ্ধান্তের সাথে কোনভাবে আপোষ করবেন না বলে কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে ইস্তফা মঞ্জুর করা আর্জি জানিয়েছেন৷
বৃহস্পতিবার কংগ্রেস পরিষদীয় দলনেতার পদ থেকে সুদীপ রায় বর্মণের পদত্যাগ করে যে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছেন তাতে রাজ্যে কংগ্রেস শিবিরে রীতিমত ভূমিকম্প শুরু হয়েছে৷ শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে পিসিসি সভাপতি বীরজিৎ সিনহা কংগ্রেস নেতৃত্বদের বিদ্রোহ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন৷ আগামীদিনে রাজ্যে কংগ্রেসের ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে এই বৈঠকে আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে বলে সূত্র অনুসারে জানা গেছে৷
তবে, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর সুদীপ রায় বর্মণকে পাঠানো শোকজ নোটিশের জেরে আগামী কয়েকদিনের মধ্যে রাজ্যে কংগ্রেস ভেঙ্গে টুকরো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ সূত্রের খবর, দুয়েকদিনের মধ্যেই সুদীপ রায় বর্মণ কলকাতায় তপসিয়া ভবনে তৃণমূল নেতৃত্বদের সাথে বৈঠক করতে যাচ্ছেন৷ হয়তবা শোকজ নোটিশের পরবর্তী পদক্ষেপ দল থেকে বরখাস্ত হওয়ার আগেই সুদীপ রায় বর্মণ সদলবলে দলত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন৷ সূত্রের খবর, কংগ্রেসের সাত বিধায়ক এক সাথে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে যাচ্ছেন৷ তাতে, কংগ্রেস সভানেত্রীর কড়া পদক্ষেপ হিসেবে সুদীপ বর্মণকে পাঠানো শোকজ নোটিশ তাদেরকে দল ছাড়ার দিকেই এগিয়ে দিয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল৷
2016-04-09