সেই অন্ধকারের গ্রাসে ত্রিপুরা

Golden Tripura Wideপ্রগতির পথে ত্রিপুরায় এখনও যে মধ্যযুগীয় অন্ধকার গ্রাস করিয়া আছে তাহা স্বীকার না করিয়া উপায় নাই৷ আজও ত্রিপুরার পাহাড় কন্দরের মানুষ আধুনিক মননশীলতার ছোঁয়া হইতে বঞ্চিত হইয়া আছে৷ সারা রাজ্যে, পাহাড় বনানী ঘেরা গ্রামীণ এলাকায়, সর্বত্র যেখানে মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির একাধিপত্য চালু আছে, সেখানে গ্রামীণ মানুষ এখনও যুক্তিবাদী চিন্তা ও চেতনার বাহিরে রহিয়া গিয়াছে৷ এখন ঝাড় ফোঁক চালাইয়া ডাইনীর প্রতি মারমুখী আক্রমণ শানিত করিতেছে৷ কয়েকদিন পরপরই বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় ডাইনী হত্যার ঘটনা ঘটিতেছে৷ ঝাঁড় ফোঁক জল পড়া ইত্যাদি ওঝা বৈদ্যের খপ্পরে পড়িয়া বহু রোগীর অকাল মৃত্যু ঘটিতেছে৷ অন্ধ বিশ্বাস যে কী বিপজ্জনক পরিণতি একের পর এক ডাকিয়া আনিতেছে তাহা তো আর নতুন করিয়া বলিবার নহে৷ এইসব বুজরুকি ও ডাইনী হত্যা রোধে রাজ্য সরকার তেমন কোনও কার্য্যকরী উদ্যোগ নিতে পারিতেছে না৷ রাজ্যের ক্ষমতাসীন এই দলের সংগঠন তো গ্রাম পাহাড় সর্বত্রই বিরাজিত৷ এইসব বুজরুকী, ঝাঁড় ফোঁক ইত্যাদি অবৈজ্ঞানিক সব কান্ড কীর্তির বিরুদ্ধে প্রচার ইত্যাদি চালাইতে পারে৷ অন্ধ কুসংস্কারের হাত হইতে যদি দলকে মাঠে নামানো যাইত তাহা হইলে বিরাট সামাজিক দায়িত্ব পালন করা হইত৷ প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ভাবে এই অন্ধ কুসংস্কার বিরোধী অভিযান প্রতিনিয়ত চালু রাখিতে হইবে৷ কিন্তু দুর্ভাগ্যের হইলেও ইহাই বাস্তব যে, রাজ্যের গ্রাম পাহাড়ের সাধারণ মানুষ, অসুস্থ জন সাধারণ সেই কুসংস্কারের হাতেই বন্দী হইয়া আছেন৷ সেই বন্দীদশা হইতে কবে তাঁহাদের মুক্তি ঘটিবে বলা মুশকিল৷ এবং ইহাও স্বীকার করিতে হইবে যে, যুক্তিবাদী মঞ্চের কর্মকর্তারা কার্য্যত আত্ম প্রচারমুখী৷ গ্রাম পাহাড়ের মানুষের মনে যুক্তি ও বৈজ্ঞানিক তত্ব নানা অনুষ্ঠান, সভা ইত্যাদির মাধ্যমে তুলিয়া মহান কর্মটি তাহারা খুব তৎপরতার সঙ্গে করিয়াছেন এমন তথ্য নাই৷
তেলিয়ামুড়ার মুঙ্গিয়াকামী থানার আঠারমুড়ার পাহাড়ি জনপদে জনৈক বেনু দেববর্মাই ওই এলাকার মানুষের কাছে যেন ভগবান৷ এই বেনু সেখানে ওঝা নামেই পরিচিত৷ জল পড়া, ঝাড়ফোঁক দিয়া তিনি নাকি মানুষের রোগ নিরাময় করেন৷ সেখানে ওঝার নিদান ডাইনী থাকার কারণে এখানে রোগ ব্যাধি পিছু ছাড়িতেছে না৷ যেমন ভাবা তেমনি কাজ৷ বেনু দেববর্মার স্ত্রীকে ডাইনী ধরিয়া নিয়াই তাহাকে হত্যায় মাতিয়া উঠেন৷ নিদারুণ সমস্যা হইতে নিজেকে বাঁচাইবার জন্য বেনুর স্ত্রীকে হত্যা করার জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরী করেন৷ সেই প্ল্যান হইতে প্রাণে বেঁচে যান বেনুর স্ত্রী৷ নিদারুন সমস্যা হইতে মুক্ত পাইতে চরণ দেববর্মা ও সঞ্জিত দেববর্মা মিলে ডাইনীকে (মৃত বেনুর স্ত্রী) হত্যা করার জন্য গত সতের মার্চ মাস্টার প্ল্যান তৈরী করেন৷ এরই মধ্যে এক টিএসআর জওয়ানের এক কন্যা সন্তানের মৃত্যুর ঘটনায় ঘৃতাহুতি হয়৷ ডাইনীকে হত্যা করিতে গিয়া ভুলবশত তাহার স্বামী বেনু দেববর্মাকে হত্যা করা হইয়াছে৷ এই ঘটনা রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি কোন জায়গায় রহিয়াছে সেটিও সামনে তুলিয়া ধরিয়াছে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *