ক্ষতমাসীন সিপিআই (এম) দলের মেলারমাঠের সদর কার্য্যালয়ের নিরাপত্তাই আজ প্রশ্ণের মুখে দাঁড়াইয়া গিয়াছে৷ পার্টির সাধারণ কমরেড নহেন রাজ্যের প্রভাবশালী দুই মন্ত্রী মানিক দে ও বাদল চৌধুরীর উপর দলীয় প্রধান কার্য্যালয়ে হামলার ঘটনা চোখে আঙুল দিয়া দেখাইয়া দিল রাজ্যের মানুষের নিরাপত্তা কী বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছিয়া গিয়াছে৷ একথা ঠিক, রাজ্যের মন্ত্রীরা যথেষ্ট নিরাপত্তা পরিবেষ্টিত থাকেন৷ সামনে পিছনে নিরাপত্তা রক্ষী বেষ্টিত হইয়া মাননীয় মন্ত্রীরা সর্বত্রই বিচরণ করেন৷ কিন্তু খোদ পার্টি অফিসেই তো তাঁহারা নিরাপত্তাহীন৷ এমন কি ঘটনা বা রহস্য বা কারণ থাকিতে পারে যে পরপর দুই মন্ত্রীর উপর ঝাপাইয়া পড়ে যুবক৷ তাহাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করিয়া আদালতে হাজির করিয়াছে৷ আদালত তাহাকে একদিনের পুলিশ রিমান্ড দিয়াছেন৷ জনপ্রতিনিধিদের উপর হামলার ঘটনা তো নতুন নহে৷ আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরীওয়াল তো জনতা কর্তৃক বেশ কয়েকবার অবরোধের শিকার হইয়াছেন৷ এই রকম জনতার হাতে মার খাইয়াও অনেক নেতা পুলিশে অভিযোগ করেন নাই৷ বিনাশর্তে ক্ষমা করিয়া দিয়াছেন৷ জনপ্রিয় নেতাদের ভাগ্যে এইরকম মারধোর প্রাপ্তির ঘটনা অতীতে বহুবার ঘটিয়াছে৷ ইতিহাসে তাহা এখনও ‘স্বর্ণাক্ষরে’ লেখা আছে বলিলে বোধহয় ভুল বলা হইবে না৷ ত্রিপুরার কংগ্রেসী মুখ্যমন্ত্রী শচীন্দ্রলাল সিংহকে বিধানসভা ভবন (বর্তমান টিপিএসসি বিল্ডিং) হইতে চেংদোলা করিয়া ছাত্ররা কামান চৌমুহনীতে নিয়া আসে৷ ক্ষুব্ধ ছাত্ররা মুখ্যমন্ত্রীর উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা সত্বেও পুলিশকে নিরস্ত থাকিতে ইঙ্গিত দিয়াছেন স্বয়ং শচীন সিং৷ একজন মুখ্যমন্ত্রীকে ছাত্ররা নির্যাতন চালাইতেছে অথচ পুলিশ নীরব দর্শক৷ পৃথিবীর ইতিহাসে এমন আর দ্বিতীয় নজীর পাওয়া যাইবে কি? ছাত্রদের অভিযোগ থাকিতে পারে, সেই অভিযোগ মুখ্যমন্ত্রী শুনিয়াছেন তবু তাহাকে চ্যাংদোলা করিয়া সেই পুরানো মহাকরণ এলাকা হইতে কামান চৌমুহনী পর্য্যন্ত আনিবার ঘটনাকে কি গণতন্ত্রের মহিমা বলা যাইবে?
শচীন সিংয়ের এই ইতিহাস এখন আর আশা করা যায়? এতবড় মহান জননেতা কি ভুভারতে আর আছে? কিন্তু আগরতলার খোদ সিপিএম মুখ্য কার্য্যালয়ে দুই মন্ত্রীকে বিশেষ করিয়া বিদ্যুৎ মন্ত্রী মানিক দেকে আক্রমণের ঘটনার পিছনে কী রহস্য রহিয়াছে তাহার জোর তদন্ত করিতেই হইবে৷ এই ঘটনা রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার প্রশ্ণটিকে সামনে আনিয়া দেয়৷ আক্রমণকারী যুবক কি মানসিক ভারসাম্যহীন? কিংবা এই যুবক কি বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এই ঝুকিপূর্ণ কর্মে লিপ্ত হইয়াছে? কিংবা পার্টির অভ্যন্তরে কোনও ষড়যন্ত্রের বিষয় জুড়াইয়া আছে? এক্ষেত্রে তদন্তে কোনও রকম শৈথল্য কাম্য হইতে পারে না৷ এই ঘটনার সঙ্গে রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার প্রশ্ণটি জড়াইয়া আছে৷ জড়াইয়া আশে সিপিএম দলের সুনাম ইত্যাদি৷ যদি আক্রমণকারী পার্টির কর্মী হন তাহা হইলে তো বিষয়টি আরও গুরুতর৷ সরিষার মধ্যেই ভুত৷ খোদ সিপিএমের রাজ্য কার্য্যালয়ে রাজ্যের মন্ত্রীর আক্রান্তের সংবাদে ত্রিপুরার মাথা হেট হইবার কথা বহির্রাজ্যে৷ সুতরাং বিষয়টিকে ধামাচাপা না দিয়া নিরপেক্ষ তদন্তই করানো হউক৷ তাহা হইলে জনমনে যে নানা প্রশ্ণ উঁকি দিয়াছে তাহারও নিরসন হইতে পারে৷ ক্ষমতাসীন সিপিএমের প্রধান কার্য্যালয়ে মন্ত্রীর উপর আক্রমণের ঘটনাকে কোনও ভাবেই খাটো করিয়া দেখিবার সুযোগ নাই৷
2016-03-02