কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রকের বরাদ্দ অর্থের লুটপাটের অভিযোগ, ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্সের বাণিজ্যিক ধান্দায় পয়ত্রিশ লক্ষ টাকার আরোগ্য মেলা সুপার ফ্লপ

AROGYAনিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২২ জানুয়ারি৷৷ কেন্দ্রীয় সরকারের আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সহায়তায় ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের ব্যবস্থাপনায় শুক্রবার আগরতলায় নজরুল কলাক্ষেত্রে আরোগ্য মেলা সুপার ফ্লপ হয়েছে৷ এই মেলাকে সার্থক করে তুলতে কেন্দ্রের আয়ুষ মন্ত্রণালয় ৩৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে৷ ইতিমধ্যেই মঞ্জুরির অর্ধশতাংশ টাকা ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে৷ বাকি টাকা এরই মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে বলে খবর৷ লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয়ে অনুষ্ঠিত এই মেলায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল একেবারেই নগণ্য৷ এরকম আরোগ্য মেলা রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এর আগে অতীতেও হয়েছে৷ সেই মেলা ছিল প্রাণচঞ্চল৷ কাতারে কাতারে মানুষ সেখানে অংশ নিয়েছে৷ কিন্তু আজকের ৩৫ লক্ষ টাকার অনুষ্ঠান ছিল বিবর্ণ, ফ্যাকাশে, জনমানবহীন৷ এই দুরবস্থার মুখ্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের অর্থ লুলুপতা, বাণিজ্যিক ধান্দা৷ এই মেলার উদ্বোধনে গিয়ে রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী বাদল চৌধুরীর চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায়৷
[vsw id=”461TaEYdLbo” source=”youtube” width=”325″ height=”244″ autoplay=”yes”]স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই মেলার বেহাল অবস্থা দেখে, জনশূন্যতা যেভাবে মেলাকে গ্রাস করেছে তাতে তিনি ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি৷ এরকম মেলা মাঠে মারা যাওয়ার কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রী ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সকে এক হাত নিয়েছেন৷ তিনি বলেন, মেলায় মানুষকে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশ গ্রহণ করতে হবে৷ পাশাপাশি নজর রাখতে হবে এই মেলা সম্পর্কে যাতে বিরূপ সমালোচনা না হয়৷ মেলাকে ঘিরে যেন বদনাম ডেকে না আনা হয় সে বিষয়ে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের আধিকারিককে সতর্ক করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ তিনি জানান, মেলা আয়োজনের জন্য কেন্দ্রীয় আয়ুষ মন্ত্রণালয় ৩৫ লক্ষ টাকা মঞ্জুর করেছে৷ এর মধ্যে অর্ধ শতাংশ অর্থ ইতিমধ্যেই প্রদান করা হয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক লাভালাভের কথা মাথায় না রেখে মেলা কিভাবে সাফল্যমন্ডিত করা যায় সেদিকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যও ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সকে পরামর্শ দিয়েছেন৷ তিনি ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের উদ্দেশ্যে বলেন, সারা দেশে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন৷ আমাদের রাজ্যে খুব একটা কাজ করতে আসেন না৷ লাভ হলে ব্যবসা করেন, না হলে বাণিজ্য করেন না৷ সেক্ষেত্রে আরোগ্য মেলার মতো অনুষ্ঠান আয়োজনের ক্ষেত্রে লাভালাভের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়ার বদলে জনস্বার্থকে বিবেচনার মধ্যে রাখার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সকে পরামর্শ দেন৷ এরই পাশাপাশি কেন্দ্রীয় অর্থানুকূল্যে আরোগ্য মেলার ব্যবস্থাপনায় ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতিকেও কটাক্ষ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সংস্থার আধিকারিকদের উদ্দেশ্যে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, এধরনের অনুষ্ঠানে আয়োজকদের ঊর্দ্ধতন কৃর্তপক্ষদের দেখা যাচ্ছে না৷
এই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে ত্রিপুরার বনজ সম্পদ কাজে লাগিয়ে আয়ুর্বেদিক এবং হোমিওপ্যাথি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে শিল্পপতিদের রাজ্যের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য উদ্যোগ নিতে ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সকে অনুরোধ জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, রাজ্যে বনজ সম্পদ ব্যবহার করে শিল্প গড়ে তোলা যায় কিনা তা ভেবে দেখা প্রয়োজন৷ রাজ্যে একার পক্ষে আয়ুর্বেদিক এবং হোমিওপ্যাথি হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব নয়৷ সেক্ষেত্রে পিপিপি মডেলে এধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়কিনা সে বিষয়ে ভেবে দেখার জন্য ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সকে অনুরোধ জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী৷
উল্লেখ্য, শুক্রবার শুরু হয়েছে তিনদিনব্যাপী আরোগ্য মেলা৷ এই মেলার উদ্বোধন করেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বাদল চৌধুরী৷ এদিন, এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আয়ুষ মন্ত্রণালয়ের ডেপুটি সেক্রেটারি রামানন্দ মিনা, রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের প্রধান সচিব এম নাগারাজু, স্বাস্থ্য অধিকর্তা, পরিবারকল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা, মেডিক্যাল এডুকেশনের অধিকর্তা এবং ইন্ডিয়ান চেম্বার অফ কমার্সের উত্তরপূর্বাঞ্চলের সিনিয়র এডভাইজার প্রমুখ৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *